কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের নিয়ামকগুলো নিম্নরূপ—
১. রাসায়নিক মাধ্যম
▪️বাষ্প : মার্কারি এবং সলভেন্ট হতে সৃষ্ট বাষ্প স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিপদসমূহের প্রধান উৎস। মার্কারি সাধারণত রাসায়নিক ল্যাবরেটরি এবং সলভেন্টসমূহ সাধারনত স্কুল শপ, গ্রাফিক আর্টস, ধাতু, কাঠ এবং বৈদ্যুতিক ইউনিটসমূহে ব্যবহৃত হয়। কার্বন টেট্রাক্লোরাইড একটি অত্যাধিক বিষাক্ত সলভেন্ট এবং এটি প্রিন্টিং প্রেসে ব্যবহৃত থিনার জাতীয় সলভেন্ট মিশ্রণের একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
▪️ফিউম (ধুম) : এটি এক প্রকার কণা। যা গ্যাসীয় অবস্থা হতে কনডেনসেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় (সাধারণ গলিত ধাতু হতে উদ্বায়ী প্রক্রিয়ার পর)। লিড এবং ক্যাডমিয়াম উচ্চ মাত্রার বিষাক্ত ফিউম। জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেশিয়াম কিছুটা কম বিষাক্ত।
▪️গ্যাস (কার্বন মনোক্সাইড) : এ গ্যাস সাধারনত অটোমেকানিক্স এবং অটোসার্ভিস শপ, জেনারেল মেটাল শপ, গলিতধাতু হিটাট্রিটিং ফার্নেস, আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট শপ, ফুড ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার শপ/ল্যাবরেটরিতে পাওয়া যায়।
• ধূলিকণা : এটি এক প্রকার কঠিন কণা। জৈব ও অজৈব পদার্থসমূহ যেমন- পাথর, আকরিক ধাতু, কয়লা, শস্য ইত্যাদি হতে পেষণ, দ্রুত আঘাত ও ডেটোনেশন মাধ্যমে ধূলিকণা উৎপন্ন হয়। ধূলিকণা ফুসফুসের প্রদাহ, চর্মরোগ, অ্যালার্জি এবং ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করে বলে এদেরকে বিষাক্ত ধূলিকণা বলা হয় ।
• কুজটিকা : গ্যাসীয় অবস্থা হতে তরল অবস্থা আনয়নের জন্য কন্ডেসেশন প্রক্রিয়া দ্বারা বা তরল পদার্থকে ছড়ানো অবস্থায় বিষাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় (যেমন— প্লাসিং ফোসিং, অ্যাটোমাইজিং ইত্যাদি) উৎপন্ন ভাসমান তরল কণাকে মিস্ট বা কুজ্ঝটিকা বলা হয়। ইলেক্ট্রোপ্লেটিং প্রক্রিয়া ক্রোমিক এসিড মিষ্ট উৎপন্ন করে এবং ইলেকট্রিক্যাল শপের স্টোরে ব্যাটারি চার্জিং এর সময়েও এসিড মিস্ট উৎপন্ন হয়।
🚻 শ্রেণির কাজ : কর্মক্ষেত্রে ধূলিকণা ও কুঞ্ঝটিকা কী এক জিনিস? এদের সম্পর্কে লেখো ।
২. জীব মাধ্যম : জবাই এবং মাংস প্যাকিং প্লান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু উৎপন্ন হওয়ার ফলে, উক্ত প্লান্টে কর্মীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। পশমযুক্ত চামড়া, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুলের কুঁচি, হাঁস-মুরগির পরিত্যক্ত অংশ এবং পোল্ট্রি হাউজের চারিপার্শ্বের মাটির দ্বারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। নোংরা স্থান ও বাসি পচা খাবারে বসবাসকারি অণুজীব। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা, এন্টামিবা, ভাইরাস এ সব কিছু মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে বিধায় এগুলো আপদ হিসাবে বিবেচিত। বিভিন্ন রোগ যেমন— ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার কফ, হাঁচি, থুথু যেখানে সেখানে ফেললে রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পাশে বসা কোন সুস্থ মানুষের নাক বা মুখ দিয়ে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশের ফলে রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। এ জীবাণুগুলো কোন তলের উপর, যেমন— টেবিল, দরজার লক, যন্ত্রপাতির হাতল, টাকা প্রভৃতির উপর ২ ঘন্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। তাই রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি হাত দিয়ে তার নাক পরিস্কার করে অথবা মুখে হাত দিয়ে হাঁচি দিয়ে, সেই হাতে যা স্পর্শ করবে তাতেই জীবাণু লেগে যাবে এবং সুস্থ শরীরে জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটবে।
সাম্প্রতিক কালে জীব মাধ্যমে ছড়ানো কোভিড-১৯ রোগটি মহামারীর আকার ধারন করে। কোভিড- ১৯ শ্বাসযন্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ, যা নতুন আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। করোনা থেকে ‘কো', ভাইরাস থেকে 'ভি', এবং 'ডিজিজ' বা 'রোগ' থেকে 'ডি' নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ কোভিড করা হয়। এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, মাংসপেশী বা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, রক্তজমাট বাঁধা বা নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং বমি, পেটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি উঠা। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন কাশি বা হাঁচি দেয় অথবা কথা বলে, গান করে বা শ্বাস নেয় তখন মুখ বা নাক থেকে নিঃসৃত ছোট ছোট কণার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. ভৌত মাধ্যম এবং অবস্থা : কিছু কিছু ভৌতমাধ্যম রয়েছে, যেগুলো শরীরের টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেয়। যেমন— সূর্যের আলো বা উচ্চ তাপমাত্রায় অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতি উচ্চ মাত্রার শব্দ, ইনফ্রারেড এবং অতিবেগুনি রশ্মি, এক্সরে ইত্যাদির কারণেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়।
নিম্নে কয়েকটি ভৌত মাধ্যম এবং অবস্থা উল্লেখ করা হলো—
• অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা।
▪️অতিরিক্ত শব্দ।
• অত্যাধিক বায়ুচাপ ।
▪️আঘাতজনিত কম্পন
• ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।
👤একক কাজ : কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ও সমস্যাসমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করো।